খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার ইতিহাস বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ নিবাসী মরহুম হাফেজ মোঃ আবদুল হাকীম আজাদী সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং অত্র এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সার্বিক সহযোগীতায় ১৯৬২ সনে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্র খালিশপুর অঞ্চলে খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসাটি...
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের ইতিহাস অনেক প্রাচীন ও পুরাতন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ, দরবেশ, পীর-আউলীয়া ও বুজুরগ©ণের আগমন এ অঞ্চলে ইসলামী শিক্ষার পথ পরিক্রমা সূচিত হয়। কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষার গতিধারা পাল্টে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার ধারা উন্মোচিত হয়। প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি কুরান, হাদিস, ইসলামী সাহিত্যসহ মহামনীষীদের জীবনী গ্রন্থ পাঠ্যসূচীর অর্ন্তভূক্ত করে মাদ্রাসা শিক্ষা ধারা সূচিত হয়। আর তা ফুলে ফলে সুশোভিত হতে থাকে এদেশের ইসলাম প্রিয়, ইসলামী জ্ঞানপিপাসু খোদভীরু ব্যক্তিদের মাধ্যমে। যার ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে ইসলামী শিক্ষার প্রানকেন্দ্র বা সূতিকাগার রুপে বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা।
মহাকাজের জন্য প্রয়োজন মহতি উদ্যোগ। আর প্রয়োজন পরিশ্রমী সৃষ্টিশীল মানুষ। যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস। তেমনি খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা সৃষ্টির ইতিহাস আনেক ঘটনা বহুল ও সৃষ্টিশীল। পুরাতন বাগেরহাট মহকুমা, বর্তমান বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত মোড়লগঞ্জ উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জম্নগ্রহন করেন মরহুম আলহাজ্ হাফেজ আব্দুল হাকিম আজাদী সাহেব। ছোট বেলা থেকে তিনি ছিলেন ইসলামী জ্ঞানপিপাসু ও সমাজসেবক। তারই কঠোর পরিশ্রমে ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনা শহরের প্রানকেন্দ্র খুলনা যশোর মহাসড়কের পাশ ঘেষে জোড়াগেট নূরনগর বয়রা এলাকায় ক্রয়কৃত ২৫ শতক জমির উপর ১৯৬০ইং সনে হেফজখানা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথী©র সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। প্রয়োজন হয়ে পরে ভৌতিক অবকাঠামো নিরামান সহ শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির আবহ। তাই তিনি প্রতিষ্ঠানের সমসা সমাধান সহ কলেবর বৃদ্ধির জন্য সমাজের ইসলাম প্রিয় বাক্তিদের পরামর্শ ও সাহায্য সহযোগিতা কামনা করেন।
মরহুম আলহাজ্ব হাফেজ আব্দুল হাকিম আজাদী সাহেব ছিলেন একজন দক্ষ পরিচালক, তার কঠোর পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম চতু©দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দেখা দেয় অবকাঠামো নির্মান সহ প্রয়োজনীয়, ভূ-খন্ডের। এতিমখানা ও হেফজখানার সন্নিকটে ছিল একটি কোল্ড স্টোরেজ। কোল্ডস্টোরেজের মালিক ছিলেন ইসলামী আদর্শের অনুসারী। প্রতিষ্ঠানটির পুণ©রুপ প্রদানের নানা সমস্যা দেখা দেয়ায় তার পরামর্শ ও আন্তরিকতায় প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয় । প্রতিষ্ঠান পূনঃস্থাপনের জন্য শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাসহ নিষ্কটক জমি খোঁজা শুরু হয়। অবশেষে খুলনা শিল্প নগরীর খালিশপুরস্থ যশোর খুলনা মহাসড়কের পাশে মুজগুন্নি নামক স্থানে প্রয়োজনীয় ০১(এক) বিঘা জমি পাওয়ায় কোল্ড স্টোরেজের মালিক ও আজাদী সাহাবের যৌথ অর্থায়নে ক্রয়কৃত জমির উপর উক্ত হেফজখানা ও এতিমখানা ১৯৬২ইং সনে পুনঃ স্থাপন করা হয়।
মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম আজাদী সাহেব ছিলেন একজন আদর্শ সমাজসেবক। তারই বড় ভাই মরহুম এ, কে, এম, আব্দুল মজিদ সাহেব তখন শর্শিনা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ পদে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি পুনঃ স্থাপন কালে মরহুম আব্দুল হাকিম আজাদী সাহেব ও বড় ভাই আব্দুল মজিদ সাহেবের পরামর্শে শর্শিনার মরহুম পীর সাহেব নেছার উদ্দীন সাহেবের নামের সাথে মিল রেখে খুলনা নেছারিয়া হেফজখানা ও এতিমখানা রাখা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ ইং ও ১৯৬৪ ইং সনে হেফজখানা ও এতিমখানার ছাত্রদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠানে কারিগরী বিভাগের কয়েকটি শাখা খোলা হয়।